মা টিকটকে শুটিং নিয়ে রুমের ভেতর ব্যস্ত, ছোট দু’ কন্যা সন্তান কে দিয়েছে বাহিরে খেলতে। একটি শিশু খেলার ছলে টিলার নিচে একটি লেক এর পাশে চলে যায়। শিশুটি লেকের পানিতে নামার চেষ্টা করে এ সময় পানিতে পড়ে গিয়ে তলিয়ে যায়। বিষয়টি বুঝতে পেরে পাশে দাড়িয়ে থাকা স্থানীয় এক সাংবাদিক পানিতে ঝাপিয়ে পরে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করে নিয়ে আসেন উপরে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে অবস্থিত “অরন্য নিবাস” নামের একটি ইকো রিসোর্টে।
জানা যায়, পানিতে পড়া শিশুটির বাড়ি ঢাকা জেলার নান্দাইল এলাকায়। তারা অরন্য নিবাস ইকো রিসোর্টে ঘুরতে এসেছেন, তবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনার দিন শিশুটির মা, খালারা মিলে কটেজের একটি রুমে টিকটক ভিডিওর শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আর শিশুটির পিতা তার এক আত্মীয় কে নিয়ে রিসোর্টের ভিতরের একটি অংশের অন্যপাশে ঘুরতে যান। আর তাদের দুটি শিশুকে বাহিরে রেখে যান খেলতে। শিশু দুইটি হাটতে হাটতে চলে যায় লেকের পারে। খেলার ছলে একটি শিশু চলে যায় রিসোর্টের লেকের পানির মধ্যে। এসময় লেকের পাশে বসে কপি পান করছিলেন কমলগঞ্জের অনলাইন পোর্টাল ধলাইর ডাকের বার্তা সম্পাদক সাংবাদিক আসহাবুজ্জামান শাওন। শিশুটিকে পানিতে পরে যেতে দেখে তিনি দৌড়ে এসে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করে উপরে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেই মুহুর্তে শিশুটির কোন আত্নীয় স্বজনদের পাওয়া যায়নি। পরে খবর পেয়ে শিশুটির পিতা ও খালু ঘটনাস্থলে এসে শিশুটিকে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিক আসহাবুজ্জামান শাওন এর ফেইসবুকের পোস্টে লিখেন…
আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে যে কয়টি ভালো কাজ করেছি, তন্মধ্যে আজকের কাজটি সর্বোত্তম ভালো কাজ বলে আমার মনে হচ্ছে। আজ একটি নিস্পাপ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছি কয়েকটা সেকেন্ড দেরী হলে শিশুটা মারা যেতে পারতো। একটা প্রাণ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের করো সাধ্য নেই। তবে একটা প্রাণ বাঁচানো গেলে সেটা যে কতটুকু আত্মতৃপ্তির হয়, তা আজ অনুভব করছি নিজে।
ঘটনাটা আজ (বুধবার) দুপুরে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বনগাঁর গ্রামের “অরন্য নিবাস” নামের একটি রিসোর্টের লেইকে। দুপুরে আমি আমার কিছু আত্নীয় স্বজন নিয়ে অরন্য নিবাস রিসোর্টে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমরা ঘুরাঘুরি শেষ করে রিসোর্টের কপিবারে বসে কপি খাচ্ছিলাম সবাই। এসময় চোখে পড়লো ফুটফুটে দুটি শিশু খেলা করছে। হঠাৎ দেখলাম একটি শিশু খেলার ছলে টিলার নিচে লেইক এর পাশে চলে গেছে, তখন সেখানে কোন লোকজন ছিল না, জায়গাটা একদম নিরিবিলি, আমিও কি মনে করে ছিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম, আমি ছিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসতে আসতে শিশুটি ততক্ষণে লেইকের ঘাটে গিয়ে পানিতে নামার চেষ্টা করতেই চোখের পলকেই পানিতে পড়ে গেলো। আমি দৌড় দিয়ে এসে দেখি মেয়েটি পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আমি সে মুহূর্তে কোন কিছু না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়লাম পানিতে, আমার পকেটে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ,প্রয়োজনীয় কাগজ ছিল শিশুটিকে বাঁচাতে গিয়ে ঐ মুহূর্তে সব ভুলে গিয়েছিলাম।
কিন্তু লেইকটি গভীর ও ঘাটের পাশটি পিচ্ছিল হওয়ায় শিশুটিকে নিয়ে উপরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছিল, পরে আমার এক ভাগিনার সহযোগিতায় নিরাপদে উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছি। তবে জানলে অবাক হবেন, ওই শিশুটিকে পানি থেকে তুলে আনার পর প্রায় দশ মিনিটের মত চেঁচামেচি করেও শিশুটির অভিভাবকের কোন খোঁজ মিলেনি। পরে অবশ্য কোথা থেকে শিশুটির বাবা এসেছে শিশুকে নিতে, কিন্তু মা নামের কোন জন্তু কে চোখে পড়েনি। তবে উপরে দেখলাম একটা মহিলা দাড়িয়ে রয়েছে ওটা নাকি শিশুটির সম্পর্কে খালা হয়। এদিকে শিশুটি যে পানিতে পড়ে মরতে মরতে বেঁচেছে তাতে শিশুটির বাবার কোন রিয়াকশন চোখে পরলো না। পরবর্তীতে শুনলাম মা নামের ঐ কলংক নোংরা মহিলাটি রুমের ভেতর নাকি টিকটক ভিডিও বানাতে ব্যস্ত রয়েছিল। এই নোংরা মহিলাটিকে কি বলা যায়? আপনারাই বলেন? আমার মনে হচ্ছিলো তখন রুমে গিয়ে ওর গালে কষে দুটি চড় মারতে। কিন্তু তা করলাম না। এই টিকটকের জন্যই সমাজ,সংসার এক সময় ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে। যত ধরনের বেহায়াপনা, নিলজ্জতা, অশ্লীলতার তা এখন টিকটকে শোভা পাচ্ছে।
পরিশেষে আর কি করবো ভিজা প্যান্ট খুলে রিসোর্টের স্টাফের কাছ থেকে চেয়ে একটা গামছা পড়ে বাসায় ফিরলাম। তবে সবচেয়ে বড় কথা আজ আমি একটা নিস্পাপ শিশুর জীবন বাঁচাতে পেরেছি।