চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি না পাওয়ায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড এর ৮টি চা বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেননি। বকেয়া মজুরি প্রদান ও বিভিন্ন দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের আশ্বাসের প্রায় ৩ মাস বন্ধের পর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড এর সবকটি বাগানের চা শ্রমিকরা গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বকেয়া মজুরি পাওয়ার পর শুক্রবার থেকে কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি পত্র না পাওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায়নি। ফলে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদান সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শফিকুর রহমান মুন্না।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদফতর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির কর্তৃপক্ষের যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, ডিডিএল নাহিদুল ইসলাম এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরিসহ অনেকে।
এ বৈঠকে ৫ ডিসেম্বর কাজে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন শ্রমিকদের ২ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেওয়া, মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের ১ মাসের বেতন দেওয়া, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ, বাগানের কর্মচারীদের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ মাসের বেতন দেয়া, বাগান বন্ধের দিনগুলোতে চা শ্রমিকদের রেশন কর্তন না করা, বোনাস ও বার্ষিক ছুটির দিন গণনার ক্ষেত্রে বাগান বন্ধের দিনগুলো অনুপস্থিত না দেখানোর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছিল।
এছাড়া অবশিষ্ট বকেয়া মজুরি আগামী ২০২৫ সালের মার্চ এর মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একইসঙ্গে ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করা হবে। এসব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল টি বাগানের শ্রমিকরা ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রসঙ্গত, চা শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে টানা ১২ সপ্তাহ ধরে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১৬টি বাগানে সব ধরনের কাজ বন্ধ করে দেয়। এতে সরকার নিয়ন্ত্রিত এ বাগানগুলো অচল হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি জানান, যৌথ বৈঠকে লিখিত সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় এনটিসির চা শ্রমিকরা খুবই হতাশ হয়েছেন। এটি শ্রমিকদের সাথে একটি তামাশা। তিনি সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শফিকুর রহমান মুন্না শুক্রবার সন্ধায় বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যায়নি। ফলে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদান সম্ভব হয়নি। আশা করা যাচ্ছে আগামী রোববার বা সোমবারের মধ্যে ব্যাংক ঋণ পাওয়া গেলে চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদান শুরু করা যাবে এবং চা শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবে।
এদিকে ভরা মৌসুমে এসে চা শ্রমিকরা চা পাতা চয়ন না করায় চা উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে করে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফাঁড়িসহ দেশের ১৬ টি চা বাগান মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ভরা মৌসুমে চা বাগান গুলি বন্ধের কারণে কোটি কোটি টাকা লোকসান মুখে পড়ছে ন্যশনাল টি কোম্পানি। এটা এখন কোম্পানির জন্য মরার উপর খরার ঘাঁ এর মত হয়ে দাড়িয়েছে।