মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দুপক্ষের ঝগড়া থামাতে গিয়ে চুরির (চাকু) আঘাতে আহত হয়েছেন কাঠমিস্ত্রি মনোয়ার মিয়া (২২)। গত শনিবার (৩০ অক্টোবর) বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ছলিমবাজার এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। আহত কাঠমিস্ত্রি মনোয়ার মিয়া কমলগঞ্জ পৌর এলাকার শ্রীনাথপুর গ্রামের আফরোজ মিয়ার ছেলে। এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় ৩জনকে আসামী করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আফরোজ মিয়া।
অভিযুক্তরা হলেন-উপজেলার ৬নং আলীনগর ইউনিয়নের বারামপুর গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে রহিম মিয়া (২২), মৃত রহমান মিয়ার ছেলে নজির মিয়া (৪২) ও ফরিদ মিয়া (৩৫)।
অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, আলীনগর ইউনিয়নের ছলিমবাজার এলাকায় রাফি মিয়ার সঙ্গে রহিম মিয়া ও নজির মিয়া রাস্তা পাশে থাকা জায়গার বেড়া নিয়ে ‘কথাকাটাকাটি’ করছেন। তাদের ‘কথাকাটাকাটি’ থামাতে এগিয়ে আসলে ফরিদ মিয়ার নির্দেশে রহিম মিয়া ধারালো চাকু দিয়ে পিঠে ও চোখের উপড়ে এলোপাতারী ভাবে মনোয়ার মিয়াকে আঘাত করতে থাকে। আঘাত করার পর পরই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় রহিম মিয়া। পরে আহত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখলে স্থানীরা দ্রুত কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তিরা ব্যক্তিরা জানান, ‘রহিম মিয়ার পরিবারের সদস্য খুব খারাপ প্রকৃতির লোক। খুবই ভালো ও ভদ্র কাঠমিস্ত্রি মনোয়ার মিয়া। তার বাড়ি পৌরসভার শ্রীনাথপুর এলাকায় তাকলেও সে দীর্ঘদিন থেকে ছলিমবাজারে রাজমিস্ত্রির কাজ করে তার সংসার চালাচ্ছে। একটা নিরপরাধ ছেলেকে এভাবে রক্তাক্ত করবে আমরা ভাবতে পারিনি। এর আগেও রহিম মিয়া ছলিমবাজার এলাকায় দেলোয়ার নামে একটা ছেলেকে চাকু দিয়ে আঘাত করেছে। ভাগ্য ক্রমে বেচে যায় দেলোয়ার তা না হলে সেও তার হাতে মৃত্যু বরণ করতে হতো।
তারা জানান দ্রুত রহিম মিয়াসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা জরুরী ভিত্তিতে করা দরকার। তা না হলে অনেকে হয়তো তাদের হাতে প্রাণ দিতে হবে।’
এ বিষয়ে থানায় অভিযোগে অভিযুক্ত নজির মিয়া বলেন, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমার ভাতিজা রহিম মিয়া আমাকে ডাক দিলে ঘটনাস্থলে যাই। পরে সেখানে জায়গার বেড়া নিয়ে ‘কথাকাটাকাটি’ হয়। তখন সকলের ভীড়ে বেড়ার গর্চি আঘাত লাগে মনোয়ারের পিঠে ও কপালে। এই প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন আপনার ভাতিজা তো চাকু দিয়ে মনোয়ারে পিঠে ও কপালে আঘাত করলো? আপনি বিষয়টা এরিয়ে যাচ্ছেন কেন? উত্তরে তিনি বলেন, না না আমার ভাতিজা চাকু দিয়ে আঘাত করেনি। এটা গর্চি আঘাত লেগেছে।’
এদিকে রহিম মিয়া বলেন, ‘নিজের সেপটির জন্য আমি চাকুটা সাথে রাখি। আমি মনোয়ারকে চাকু দিয়ে আঘাত করতে চাইনি। আমি রাফিকে আঘাত করতে চাইছিলাম। কিন্তু মনোয়ারের শরীরের পিঠে ও চোখে পড়ে যায়।’ সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব রহিম মিয়া বলেন, ‘চাকু নিজের সেপটির জন্য রাখতে হয়।’
রহিম মিয়ার চাকুর আঘাত প্রাপ্ত আহত মনোয়ার মিয়া বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। তাদের ঝগড়া থামাতে দৌড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পূর্ব বিরোধের জেরে রহিম আমাকে এই সুযোগে চাকু দিয়ে একবারে মারার চেষ্টা করে। আল্লাহর রহমতে আমি প্রাণে বেচে যাই। আমি এই অপরাধের শাস্তি চাই।
আহত মনোয়ারের বাবা অভিযাগকারী আফরোজ মিয়া বলেন, আমার ছেলে খুব সহজ সরল। এলাকার ১০০ভাগ মানুষ বলবে সে ভালো। কাঠমিস্ত্রির কাজ আমার সংসার চালায়। রাফি মিয়ার সঙ্গে রহিম মিয়া ও নজির মিয়া রাস্তা পাশে থাকা জায়গার বেড়া নিয়ে ‘কথাকাটাকাটি’ করছে। আমার ছেলে সেখানে গেল তাদের ঝগড়া থামাতে তাকেই মারার উদ্যেশ্যে রহিম মিয়া চুরি দিয়ে আঘাত করে। আমি এ বিষয়ে থানায় একটা অভিযোগ করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমি গরীব মানুষ। কাজ কাম করে সংসার চলে। রহিম মিয়া, নজির মিয়া ও ফরিদ মিয়া খুবই প্রভাবশালী। তারা অভিযোগের পর থেকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দামকি দিচ্ছি। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতংকে আছি।’
থানায় লিখিত অভিযোগের বিষয়ে কমলগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, মনোয়ারের বাবা আফরোজ মিয়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।