বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :

মৌলভীবাজারে ঈদের ছুটিতে ৯৫ ভাগ রিসোর্ট ও হোটেলে আগাম বুকিং

সালাহউদ্দিন শুভ / ৫৫ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫

ঈদ বা অন্য কোনো দীর্ঘ ছুটি এলেই প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকেরা ভিড় জমান চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারে। পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় এবার পর্যটকদের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে টানা ছুটি। আগামী ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা ১০ দিনের ছুটি রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি আরও দীর্ঘ, ১৯ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে স্কুল-কলেজ। এ দীর্ঘ ছুটি উপভোগ করতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটছেন দেশের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে।

এই পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত মৌলভীবাজার। এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে শতাধিক হোটেল ও রিসোর্ট। এরই মধ্যে ৬ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য হোটেল-রিসোর্টগুলোর প্রায় ৯৫ ভাগ আগাম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ঈদের দিন থেকেই সব হোটেল-রিসোর্ট হাউজফুল থাকবে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক বছর ধরে ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় অনেকেই দেশীয় পর্যটন গন্তব্যগুলোকেই বেছে নিচ্ছেন। মৌলভীবাজার এমনিতেই বছরজুড়ে পর্যটকে মুখর থাকে। ভিসা জটিলতার প্রেক্ষিতে এখন সেই ভিড় আরও বেড়েছে।

জেলার চারপাশজুড়ে সবুজে ঘেরা চা-বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং টিলা, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল অভয়াশ্রম, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, চা কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি-৭১, লাল পাহাড়, শঙ্কর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, ব্রিটিশদের সমাধিস্থল ডিনস্টন ওয়ার সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পল্লি।

এছাড়াও, কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, ধলই চা-বাগান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, ২০০ বছরের পুরনো ছয়চিরী দিঘী, মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড, খাসিয়া পুঞ্জি এবং হাকালুকি ও মাধবকুন্ড হাওর পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

শ্রীমঙ্গলের রাধানগর ও ডলুবাড়ি এলাকায় পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বেশি রিসোর্ট রয়েছে। লেমন গার্ডেন রিসোর্টের মালিক সেলিম মিয়া জানান, “৮ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত শতভাগ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”

কমলগঞ্জে টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ ও অরণ্য নিবাস অন্যতম রিসোর্ট। অরণ্য নিবাসের পরিচালক এহসান কবির সবুজ জানান, “৪ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত আগাম বুকিং শতভাগ পূর্ণ। এবার ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ও দিয়েছি। রিসোর্ট সাজানো হয়েছে নতুনভাবে।”

শ্রীমঙ্গল ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল আলম বলেন, “এই ছুটিতে বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। তাই ট্যুর গাইডদের ব্যস্ততা কিছুটা কম হলেও, হোটেল-রিসোর্টগুলো ভালো আগাম বুকিং পেয়েছে।”

গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক ও শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, “শ্রীমঙ্গলের প্রায় সব রিসোর্টই শতভাগ বুকড। শহরের কিছু রিসোর্টে এখনও কয়েকটি রুম খালি আছে। পর্যটকদের সুষ্ঠু অভ্যর্থনার জন্য আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রেনের টিকিট সংকটে অনেক পর্যটক ভোগান্তিতে পড়েন। ঢাকা-সিলেট রুটে নতুন ট্রেন সংযোগ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন করলে পর্যটক ও স্থানীয়রা উপকৃত হবেন।”

ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের পরিদর্শক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে প্রচুর পর্যটক আসবেন। নিরাপত্তার জন্য পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।”

শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, “ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ শেষে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন, সে লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।”


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর