আহ্ কত জোড়া তালি দেওয়া ঘর। মানুষ কতটুকু অসহায় হলে এমন ঘরে বসবাস করতে পারে। কাঁচা পুরাতন এই ঘর নির্মাণ করতে দিচ্ছে না প্রভাবশালী ব্যক্তি। আজকাল কি এমন ঘর খুবই দেখা যায়,বলতে গেলে বিলুপ্তের পথে। বৃষ্টি ও ঝড় তুফানের সময় এমন ঘরে পরিবারের সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন দিনমুজুর তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়া। নিজেও জানেন না কখন ধসে পড়তে পাড়ে পুরাতন নির্মানাধীন এই ঘরটি।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলীয়া গ্রামে মৌরসী সুত্রে প্রাপ্ত পৈত্রিক ভিটাতে পুরাতন বসত ঘর সংস্কার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের বাঁধা ও হামলায় সামিনা (২১) নামের এক যুবতী আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (২২জুন) সকাল সাড়ে ৭ টায় উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলীয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাজুল ইসলাম। অভিযোগের সুত্রে এই প্রতিবেদক যায় সড়জমিনে বিস্তারিত জানতে। তখন করুন কাহিনী দেখতে পায় প্রতিবেদক।
সরজমিনে ও থানায় অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলীয়া গ্রামের মৃত নজব উল্ল্যার ছেলে তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়ার সাথে একই গ্রামের মকসন মিয়ার ছেলে শাহীন মিয়া (সম্পর্কে চাচাতো ভাই) বিবাদ সৃষ্টি আছে। তাদের মৌরসী সুত্রে প্রাপ্ত ভূমিতে পাশাপাশি ভাবে উভয় পরিবার অর্থে বলীয়ান শাহীন মিয়া তার অংশে পাকা ঘর ও তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়া তাদের ১২ শতক জায়গায় ছন, বাঁশ ও মাটির দেয়ালের ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন। বিগত ২০২০ সালে অর্থহীন দিনমজুর তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়ার বসতবাড়ী দখলে অর্থে বিত্তে বলীয়ান শাহীন মিয়ার কু-দৃষ্টি পড়ে। ফলে ২০২১ইং সালের ৪ এপ্রিল তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে মৌলভীবাজার জর্জ আদালতে ৪২/২১ স্বত্ব মামলা দায়ের করেন। যা আদালতে এখনো বিচারাধীন আছে।
সম্প্রতি তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়ার বসবাস করা কাঁচা ঘরটি ধবসে পড়ার উপক্রম হয় এবং বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির সময় ঘরে ছাল দিয়ে বৃষ্টি পড়ে। ভাঙ্গা ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। তাদের মানবেতর জীবন যাপনের অবস্থা দেখে স্থানীয় বিত্তশালীরা আর্থিক সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেন। বিত্তশালীদের আর্থিক সহযোগিতায় বসতঘরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
তাজুল ইসলাম ও ফাজিল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের বাপ দাদার জায়গায় ঘর নির্মান করে বসবাস করে আসছি। আমাদের ছন বাঁশের ঘরটি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ঘরের ভিতরে পানি পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে এক রকম খোলা জায়াগায় বসবাস করছি। যে কেউ যদি আমাদের এমন অবস্থা দেখে তাহলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারবে না। আমাদের এই দুঃঅবস্থা দেখে স্থানীয় বিত্তশালীরা আর্থিক সহযোগিতায় হাত ভাড়িয়ে দেন। বিত্তশালীদের আর্থিক সহযোগিতায় বসতঘরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেই।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘২২ জুন তার বসত ঘরটি সংস্কার করতে গেল সকাল আনুমানিক সাড়ে ৭টায় শাহীন মিয়া, ছালেক মিয়া ও রুহুল মিয়া গংরা অবৈধ ভাবে বাঁধা প্রদান করেন। এসময় ঘর তৈরীতে কেন বাঁধা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে শাহিন মিয়া ও তার স্ত্রী মিলে তাজুল ইসলামের মেয়ে আমিনা বেগম (২১) হাত মোছড়ে মেড়ে রক্তাক্ত জখম করে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বাঁধা প্রদানের কারনে এখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সহ আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশংকায় সংস্কার কাজ বন্ধ করে কমলগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
তারা আরও বলেন, প্রতিপক্ষ শাহিন মিয়া গংরা জোর পূর্বক আমাদের জমি দখল করতে চায়। আমরা প্রশাসন সহ সকলের সহযোগীতা চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য শামীম আহমেদ জানান, ‘আমার জানা মতে ফাজিল ও তাজুল মৌরশী ও পৈত্রিক সুত্রে এই জায়গার মালিক। তারা দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর ধরে বসতবাড়ী তৈরী করে ভোগ দখল করে আসছে। নিজের পুরাতন বসতঘর সংস্কার করতে গেলে বাঁধা প্রদান করা মোটেও কাম্য নয়। আমরা চাই প্রশাসন সুষ্ট বিচার করে তাদের জায়গা বুঝিয়ে দেখ।’
ঘর সংস্কারে বাঁধা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের দলিলের জায়গা। আমরা কেন দখল করতে যাব? এখানে তাদের কোন জমি নেই। আমরা তাদের থাকতে দিয়েছিলাম।এখন আমাদের জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। তাই বাঁধা দিয়েছি। এখানে মারামারির কোন ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া এই ভুমি নিয়ে মৌলভীবাজার জর্জ আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বিষয়টি আইনি ভাবে সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিয়াজ মূর্শেদ রাজু সাথে য়োগাযোগ করার চেষ্টা করলে উনাকে পাওয়া যায়নি। জাানা যায় তিনি অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এসব বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় কোনো অভিযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল আলমের মোটোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।’