রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালের পন্টুনে বাঁধা দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে আরেকটি লঞ্চ প্রবেশের সময় একটি লঞ্চের রশি ছিঁড়ে ৫ জন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই পাঁচজনের মধ্যে একই পরিবারের ৩ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার মাটিচোরা গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে বিল্লাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৬), তাদের মেয়ে সাইমা (৩)। তারা তিনজন একই পরিবারের সদস্য। বাকি দুজন হলেন পটুয়াখালী সদরের জয়নাল আবেদিনের ছেলে রিপন হাওলাদার (৩৮) এবং ঠাকুরগাঁও সদরের নিশ্চিতপুর এলাকার আব্দুল্লাহ কাফীর ছেলে রবিউল (১৯)।
ঘাটে বাঁধা দুটি লঞ্চ হলো ‘এমভি তাশরিফ-৪’ ও ‘এমভি পূবালী-১’ আর ধাক্কা দেয়া লঞ্চটির নাম ‘এমভি ফারহান-৬’। লঞ্চে যাত্রী ওঠার সময় আরেকটি লঞ্চের ধাক্কায় ছেঁড়া রশির আঘাতে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতরের দিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে কোতোয়ালি থানাধীন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি তাশরিফ-৪ ও এমভি টিপু নামে দুটি লঞ্চ রশি দিয়ে পন্টুনে বাঁধা ছিল। লঞ্চ দুটির মাঝখান দিয়ে ফারহান নামের আরেকটি লঞ্চ প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে গেলে পাঁচ জন যাত্রী লঞ্চে ওঠার সময় গুরুতর আহত হন। এদের মধ্যে বাবা-মা ও সন্তান ছিল। পরে সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের অ্যাম্বুলেন্সযোগে আহতদের মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানকার জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নদীতে জোয়ার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে হঠাৎ রশি ছিঁড়ে যাত্রীদের ধাক্কা দিলে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গুরুতর আহত পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) জরুরি বিভাগের ডিউটিরত চিকিৎসক ডাক্তার হিমাদ্রি শেখর।
তিনি জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাদের শরীরে পালস না পাওয়া যাওয়ায় তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হওয়ায় পাঁচজনের শরীর থেকেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি নেই। এ ঘটনায় পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, নিহতদের মধ্যে একজন নারী, তিনজন পুরুষ ও একজন শিশু রয়েছে। তাদের মৃতদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে রাখা আছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর পরই অভিযুক্ত এমভি ফারহান ৬ এর চালক পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটে দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন জানান, ফারহান-৬ লঞ্চটি জোরে পার্কিং করতে যাওয়ায় তাসরিফের রশি ছিঁড়ে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে। এ দুর্ঘটনার পর এমভি ফারহান ও এমভি টিপুর যাত্রা বাতিল করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এ ঘটনায় নৌ পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নৌ পুলিশের ঢাকা জোনের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।
ফেয়ারী শিপিং লাইনস লিমিটেডের মালিকানাধীন এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চটি ঢাকা-চরফ্যাশন-বতুয়া রুটে চলাচল করে।
বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জয়নাল আবেদীন জানান, লঞ্চের রশি ছিঁড়ে ঘটা এ দুর্ঘটনার পর এমভি ফারহান-৬ ও এমভি তাসরিফ-৪ এর রুট পারমিট তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়েছে।
৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি
ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে রশির আঘাতে পন্টুনে থাকা ৫ জন যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (ক্রয় ও সংরক্ষণ) মো. রফিকুল ইসলাম কমিটির আহ্বায়ক, নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. আজগর আলী এবং বন্দর শাখার যুগ্ম পরিচালক মো. কবীর হোসেন কমিটির সদস্য। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের নিকট প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে।