জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে যেসব দল নানা শর্তজুড়ে দিচ্ছে তাদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কারও নাম না নিলেও গত কিছুদিনে যেসব পুরোনো ও নতুন দলের নেতারা নির্বাচন আয়োজনের আগে শর্ত দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আমরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। আজকে যখন ভোটের সময় আসছে-এখন বলেন, এটা না করলে ভোট হবে না, ওটা না করলে ভোট হবে না। আওয়ামী লীগ তো দেশটাকে বাপের তালুকদারি ভেবেছিল যার কারণে যা-খুশি তাই হয়েছে। আপনারও কি তাই ভাবেন? এই বাংলাদেশ কারো তালুকদারি নয়। এই বাংলাদেশ জনগনের। কথাবার্তা বলার সময়ে হিসাব করে বলবেন।’
বুধবার দুপুরে রাজধানীর শাহজানপুরে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে শাহজাহানপুরের রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এই কর্মশালার আয়োজন করে।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কিছু লোভী রাজনীতিবিদ আছেন, কিছু লোভী রাজনৈতিক দল আছে, যারা শুধু বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা করে, কার্যকর কোনো বিরোধিতা নয়। এই দলগুলো পাকিস্তান সৃষ্টির লগ্ন, ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শুধু বিরোধিতাই করে গেলো। দেশপ্রেমের লেশমাত্র তাদের ভেতরে নাই। তারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের মানুষকে ভালোবাসে না। তারা ভালোবাসে যেভাবে হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে, যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে।’
এসব দলকে ভোটে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভোটে আসেন। ভোটকে ভয় পান কেন? নির্বাচনকে ভয় পান কেন?’ নির্বাচন বিলম্বের প্রস্তাবের সমালোচনা করে আব্বাস বলেন, ‘যারা লম্বা লম্বা কথা বলেন, নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, করতে দেওয়া যাবে না, তারা বুকে হাত দিয়ে বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আপনাদের ক’জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন?’
নিজেই তাদের পাল্টা উত্তর দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপির ৪২২ জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন এক মাসে। আপনাদের ক’জন হয়েছে?’ বিএনপিকে নিয়ে নানা সমালোচনা প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, “একটা কথা আছে না… সব পাখি মাছ খায়, দোষ হয় মাছরাঙ্গার। এখন বিএনপির বিরুদ্ধে বলতে সহজ। মরহুম সাইফুর রহমান সাহেব সিলটি ভাষায় বলতেন… ‘হাড্ডির পাশের মাংস খাইতে খুব মজা লাগে।’ বিএনপি একটি বড় দল, গোছানো দল, সুন্দর দল। এই দলের বদনাম করতে খুব মজা লাগে মানুষের। বিভিন্ন দল এক যোগে, বিভিন্ন টেলিভিশন এক যোগে, বিভিন্ন ইউটিউবার একযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে।”
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,‘এগুলো প্রতিরোধ করতে হবে আমাদের কাজের মাধ্যমে। জনগণের পাশে থেকে তাদের বোঝাতে হবে বিএনপি ছাড়া এদেশে জনগণের কোনো বন্ধু নাই।’ দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে অনেক বদনাম করতেছে। কিন্তু ওই সমস্ত লোক–অপকর্ম করে তারা, চাঁদাবাজি করে তাঁরা, দুস্কর্ম করে তারা, আর চাপিয়ে দেয় বিএনপির ওপরে। এই সমস্ত চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। যদি না করেন, যদি জনগণের মন থেকে উঠে যান, আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে তার চেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। সাবধান থাকবেন।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সবার না, দুই-একজনের নামে অভিযোগ আছে। একটা এলাকায় আমাদের ১০০ কর্মীর মধ্যে দুইটা কর্মী খারাপ। ৯৮ জন কর্মী তো খারাপ না। দুজন লোকের জন্য সব কর্মী কালিমা লিপ্ত হবে এটা হতে দেওয়া যাবে না। যদি কোনো চাঁদাবাজ ঢুকে পড়ে কিংবা আসে, তাদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেন অথবা পুলিশকে সোপর্দ করেন।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।