মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন

কথা রাখতে পারেননি মেয়র, উচ্ছেদ হয়নি হকার

রিপোটার : / ৮৬ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪

১ মাসের মধ্যে নগরের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসা হকারদের উচ্ছেদ করা হবে- গত ১৬ জানুয়ারি এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন সিলেট সিটি মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তবে নির্ধারিত ১ মাস পেরিয়ে গেলেও কথা রাখতে পারেননি মেয়র। এখনো নগর সড়ক আর ফুটপাতগুলো দখল করে আছে হকাররা।

হকারদের কারণে ফুটপাত দিয়ে হাঁটাচলার জো নেই পথচারীদের। আর সড়কের অনেকাংশ দখল করে রাখার কারণে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। ফলে সিলেট নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে উঠেছে হকার। প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে হকারদের সড়ক থেকে সরাতে না পেরে এবার মেয়র আনোয়ারুজ্জামান বলছেন, রমজানের আগেই হকারদের পুনর্বাসন করা হবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরের লালদিঘীরপাড়ে স্থায়ী পুনর্বাসন করা হবে হকারদের। তাদের গলি ও শেড তৈরি করে দেওয়া হবে। এ কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। রমজানের মধ্যে হকারদের পুরোপুরি সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট মেট্টোপলিটন চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সিলেটের রাস্তাঘাট হকারমুক্ত করা হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে তার আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে হকারদের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিষয়টা আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ করতে শুরু করেছি। হকার নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সাথে আলোচনা হচ্ছে।

এ অনুষ্ঠানে মেয়র আরও বলেছিলেন, বিষয়টির সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। রাজপথে হকার থাকার কারণে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। ইনশাল্লাহ আগামী একমাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। সিলেটের রাজপথ অবশ্যই হকার মুক্ত করতে বা রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবকিছু করা হবে।

জানা যায়, সিলেট নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হকার। নগরের প্রথম মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান থেকে শুরু করে সদ্য সাবেক আরিফুল হক চৌধুরীর সময়েও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল- হকার উচ্ছেদ। কিন্তু কেউই সমাধান করতে পারেননি। অবশ্য আরিফুল হক চৌধুরী নগরভবনের পেছনের লালদিঘীর পাড়ে ‘হলিডে’ মার্কেট চালু করেছিলেন। সেখানে হকারদের পুনর্বাসনও করা হয়। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় তারা চলে আসেন ফের সড়ক ও ফুটপাতের ওপর। আরিফের দায়িত্ব পালনের শেষ সময় থেকে সড়ক ও ফুটপাতে হকারদের উৎপাত আরও বেড়ে যায়। বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের নির্বাচনী ইশতেহারেও হকার উচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আগের তুলনায় হকারের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।

প্রতিদিনই সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মহানগরের প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টার বিভিন্ন সড়কে ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ হকারদের দখলে থাকে। ভ্রাম্যমাণ কাপড় বিক্রেতা ছাড়াও মাছ ও সবজি বিক্রেতারাও বসেন সড়ক-ফুটপাতে। খোদ নগরভবনের সামনের অংশ সবজি ও মাছ বিক্রেতারা দখল করে রাখে প্রতিদিন। রাতের বেলা বিদ্যুতের আলোরও সুবিধা পান এসব অবৈধ ব্যবসায়ী। তবে আসন্ন রমজান মাস চলাকালেই মহানগরের সব হকার ফের লালদিঘীর পাড়ের ‘হলিডে’ মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

মেয়র বলেন, ‘এর আগে বহুবার হকারদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত কোন কাজে আসেনি। আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এ সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। তারই প্রেক্ষিতে হকারদের নির্ধারিত স্থানে পুনর্বাসন করে নগরবাসীকে যানজট ও ফুটপাত মুক্ত শহর উপহার দিব।

তিনি আরও বলেন, দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে লালগিঘির পাড়ে হকারদের জন্য শেড নির্মাণে ইতিমধ্যে ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হবে এবং সিলেটবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে। তিনি বলেন, লালগিঘিরপাড়ে যাতে বৃষ্টিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদরে ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেজন্য মাটি দিয়ে গলিগুলো উঁচু করে শেড বানিয়ে দেওয়া হবে। আশা করছি- রমজানে বিনা ভোগান্তিতে ফুটপাত ও সড়কে নগরবাসী ও পথচারীরা হাঁটতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের দু’পাশে শত শত হকার বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সুযোগ না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে যানবাহন ঘেঁষে হাঁটছেন পথচারীরা। এ ছাড়া নগর ভবনের সামনের অংশ থেকে প্রধান ডাকঘর পর্যন্ত সবজি বিক্রেতা ও মাছ ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন। প্রতিদিন দুপুর গড়ালেই ফুটপাত চলে যায় হকারদের দখলে। মধ্যরাত পর্যন্ত হয় বিকিকিনি।

অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মচারী, কতিপয় পুলিশ সদস্যরা টাকা নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেন। যার কারণে ফুটপাতে বসে যারা ব্যবসা করেন, তারা সন্ধ্যায় বিদ্যুতের আলোরও সুবিধা পান। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, যানজট নিরসন ও হকারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি সিসিকের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। যদিও হকার উচ্ছেদের বিষয়টি আমাদের না। তবে সড়কে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে সে হকার হোক আর যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মেয়র কোনো আলটিমেটাম দিলে সেটা তার বিষয়। তবে সিটি করপোরেশন আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করব।


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর