বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :
সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি গ্রেপ্তার  বিয়ে করলেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ খ্যাত নীলা পদত্যাগ করলেন টিউলিপ মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের মাস্টার প্যারেড ও মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত কমলগঞ্জে বেলি রাসোৎসব অনুষ্ঠিত কমলগঞ্জে সিএনজি চালককে ফিল্মি স্টাইলে বেধরক মারধর, থানায় অভিযোগ কমলগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে ১হাজার বাধাঁকপির গাছ কেটে ফেললো আল আমিন সিলেটে আজহারীর মাহফিলে চুরি, ৭৪টি জিডি, দুটি মামলা শ্রীমঙ্গলে তিন দিনব্যাপী বর্ণিল আয়োজনে হারমোনি ফেস্টি ভ্যালের সমাপ্তি কমলগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তি উদযাপন উপলক্ষে ১১৫ তম বেলিরাস অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপুড়া পিঠার উপকরণ ঢলুবাঁশ

সালাহউদ্দিন শুভ / ৪৫ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫

কালের পরিবর্তনে ডিজিটাল সভ্যতার গ্রাসে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য চ্ঙ্গুা পিঠা। বদলে যাচ্ছে মানুষের রুচিবোধ। বাংলাদেশের সীমান্তবতী জনপদ মৌলভীবাজার ও সিলেটের প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠে-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপুড়া পিঠা প্রায় বিলুপ্তের পথে। আগের মতো এখন আর গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্যও তাই দেখা যায় না।

একটা সময় ছিল বাজারে মাছের মেলাও বসতো। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর হতে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিল মৌলভীবাজার ও সিলেটের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। বাড়িতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা মাছ বিরান আর নারিকেলের পিঠা বা রিসা পরিবেশন না করলে যেন লজ্জায় মাথা কাটা যেত। বর্তমানে সেই দিন আর নেই।

চুঙ্গাপুড়া পিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল) সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদও হয় না।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাহারি এলাকায় ডবলছড়া পুঞ্জি ও ইসলামপুর এলাকা থেকে এদিকে বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়িতে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ি ও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে।

অনেক আগেই বনদস্যু ও ভুমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখন ও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।

এদিকে, পাহাড়ে বাঁশ নাই বলে বাজারে ঢলুবাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী এলাকা থেকে ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজারসমূহে বিক্রির আশায়। বাঁশটিও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না, কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভিতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমাণে খেড় (নেরা) দরকার পড়ে। খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি।

একটা সময় ছিলো শীতের মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে প্রায়ই বাজারে মাছের মেলা বসত, বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব পৌষ সংক্রান্তির সময় এ বাঁশগুলো কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ, আদমপুর, মুন্সীবাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা গেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়িও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে। অনেক আগেই বনদস্যু ও ভুমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।

ডলুবাশ বিক্রিতা বানু , রশময় ও রেন্দ্র শব্দকর জানান, আগে তো আমার প্রচুর ঢলুবাঁশ সংগ্রহ করতাম ১০-১৫ আগ থেকে। এখন আর সেভাবে সংগ্রহ করা হয়না। মানুষের চাহিদা কম থাকায়। তারপরও এই কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার এলাকায় অনেক হিন্দু মানুষের বসবাস তারা এগুলো খুবই পছন্দ করে। তারপাশে মুসলিমরা ও এখানে ঢলু বাশ সংগ্রহ করে পিঠা তৈরী করে খাওয়ার জন্য। আমার ৩জন ব্যবসায়ী এই বাজারে প্রায় ৫ হাজার ঢলুবাঁশ নিয়ে এসেছি। প্রতিটি পিঠার বাঁশের দাম ৫-৬ টাকা করে।

পিঠা তৈরি করার জন্য মুন্সীবাজারে ঢলুবাঁশ নিতে আসা ঝুলন চক্রবর্তী ও সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে সব সময় তো এই জিনিসগুলো পাওয়া যায় না। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এগুলো খুব কম পরিমাণ বাজারে উঠেছে। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে প্রচুর দেখা যেত। এখন কালের পরিবর্তনে হারিয়ে বসেছে। বাজার আসার সময় পরিবারের সদস্যরা বললো পিঠা তৈরি করার জন্য এই ঢলুবাঁশ পেলে নিয়ে যেতে, তাই কয়েকটা বাজারগুলো ঘুরে দেখলাম পাইনি এখন মুন্সীবাজারে স্বল্প পরিমাণ নিয়ে এসেছে এখন বিক্রেতা আমি সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি বাসায়।’

কমলগঞ্জ উপজেলার লেখক-গবেষক ও উন্নয়ন চিন্তক আহমদ সিরাজ জানান, ‘আগে কম-বেশি সবার বাড়িতে ঢলু বাঁশ ছিল। এখন সেই বাঁশ আগের মতো নেই। এই বাঁশ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় এই ঢলুবাঁশ দিয়ে চুঙ্গাপুড়ার ধুম লেগেই থাকত।’


আরো সংবাদ পড়ুন...
এক ক্লিকে বিভাগের খবর