নিজ অর্থায়নে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) ইউএনও জয়নাল আবেদীন। সময় পেলেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কমলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার কমলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলীনগর ইউনিয়নের কামদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপন, টিফিন, শুকনো খাবার, খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ করেন কমলগঞ্জে (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) ইউএনও জয়নাল আবেদীন।
৩৫তম বিসিএস ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এরপর কোভিড-১৯ পরবর্তী সময় থেকেই নিজ অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে খাতা, কলম, স্কুল ইউনিফর্মসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, বিদ্যালয় পরিদর্শন, শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা সহ শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা চিহ্নিত করণ এবং তা সমাধানের লক্ষে সম্ভব্য করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে তরান্বিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
সরকারিভাবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে ইউএনও হিসেবে করণীয় থেকেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ কাজের সম্প্রতি স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন জেলা পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরুষ্কার ২০২৩-২০২৪। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়সমূহের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির চূড়ান্ত মূলায়নে কমলগঞ্জ উপজেলা ১ম স্থান অধিকার করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টারদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার কমলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দের শতাধিক শিক্ষার্থী ও কামদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজ অর্থায়নে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে খাতা, কলম ও রুল পেন্সিল, টিফিনবক্স,শুকনো খাবার, ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট,ক্যারামবোড উপহার হিসেবে দেন ইউএনও জয়নাল আবেদীন। এসময় স্কুলগুলোর আঙ্গীনায় বিভিন্ন ফলজ গাছ রোপন করেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, জাতি গঠনে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন। তিনি এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই শিক্ষা, খেলাধুলা ও মাদকের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি এ উপজেলায় ক্রীড়ার উন্নয়নে স্কুল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ সহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আসছেন। তার এই কর্মকান্ডে বিভিন্ন মহলে বেশ প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। যার খবর দেশের সুনামধন্য বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও আঞ্চলিক পত্রিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
কমলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতু। তার বাবা বদরুল ইসলাম। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার মেয়ে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আসা করে। পড়াশোনায়ও খুব ভালো। কমলগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী অফিসার আমার মেয়েকে টিফিনবক্স, খাতা, কলম, খাবার ও খেলার কিছু সামগ্রী দিয়েছেন। সে খুব খুশি হয়েছে। তার পড়াশোনার মনোবল আর বেড়ে গেল এমন উপহার পেয়ে। এই ইউএনও আসার পর থেকে শিক্ষা, খেলাধুলা ও বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন সেটা আগে কখনো ছিল না।’
কামদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জয়নুল আবেদীন জানান, ‘জাতি গঠনে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন। শিক্ষা, মাদকের প্রভাব থেকে তরুণ ও যুব সমাজকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন তিনি। ইউএনও জয়নাল আবেদীন প্রায় সময় আমাদের স্কুলগুলোতে এসে বাচ্চা ও শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে আলোচনা ও খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন। আমরাও সবাই সচেতন থাকি। শিক্ষার জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ। ইউএনও স্যারের এমন উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্লাবন পাল, কমলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালা উদ্দিন, কামদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জয়নুল আবেদীন সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবক।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকেই সবসময় বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে খেলাধুলা ও শিক্ষা উপকরণ সামগ্রী যেমন-ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট, বল, খাতা, কলম, পেন্সিল, টিফিনবক্স, কেরামবোর্ড, খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও নিয়মীত স্কুলগুলো পরিদর্শন করা হয়। ঝরে পড়া ছাত্রদের খুঁজে খুঁজে স্কুলমুখী করতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষা উপকরন ও বৃক্ষ রোপন করা হয়। শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে মুক্ত রাখতে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাউন্সিলিং করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘জাতি গঠনে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। তরুণ প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার গুরুত্ব বিবেচনা করে থাকে।’