নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এই বাজেট পেশ করবেন, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ সরকারের অধীনে এটি প্রথম বাজেট।
ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। সংসদ না থাকায় আগামী অর্থবছরের বাজেট একযোগে প্রচার করা হবে বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার এবং সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল ৩টায় পূর্বে রেকর্ডকৃত বাজেট বক্তব্য বিটিভি ও বেতারে সম্প্রচারিত হবে। একটি সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, বিটিভি থেকে ‘ফিড’ নিয়ে অন্যান্য টিভি ও বেতারেও তা একযোগে প্রচার করা হবে।
এর আগে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বাজেট বিটিভি ও বেতারে উপস্থাপন করেন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে বর্তমান সরকার। এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য রাজস্ব আয় বাড়িয়ে বাজেট ঘাটতি কমানো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ। এতে কর ও ভ্যাট ছাড়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে, যার কারণে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ আসার আশঙ্কা রয়েছে।
২০২৪ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ মাস মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। বর্তমানে তা কমে ৯ শতাংশে এলেও সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা এখনো চাপে। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ব্যবহৃত পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করছে। ফলে সাধারণ মানুষের ব্যয় আরও বেড়ে যেতে পারে।
প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শুল্ক-কর ও ভ্যাট বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছে, যা বাজারে পণ্যের দামে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
নতুন বাজেটে ৬২২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস এবং ১০০টি পণ্যে কাস্টমস ডিউটি কমানোর প্রস্তাব রয়েছে। এতে উপকৃত হতে পারে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি, পেপার পণ্য, বাস, নিউজপ্রিন্ট, ক্যানসার চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ এবং পরিবেশবান্ধব পণ্যের কাঁচামাল। এলএনজি ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাবও থাকছে।
ব্যবসা সহজ করতে আমদানি ঘোষণায় ভুল থাকলে শাস্তি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৪০০ শতাংশ জরিমানার বদলে তা কমিয়ে ২০০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।