মসজিদের মুঠি দিতে না পারায় মৃত্যুর পর মাইকে প্রচারনা এবং কবরস্থানে লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়ার খাঁটিয়া (করার) না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সর্দার ও মসজিদ কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। গ্রামের ৪৫টি পরিবার রয়েছে সভাপতি (গ্রাম সর্দার) এর রোষানলে। ফলে এলাকায় গ্রামবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব কর্মধা গ্রামে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ব কর্মধা গ্রামের প্রতিবন্ধী মো. ফারুক আহমেদ (৫৫) গত বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে নিজ বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর নিজ গ্রামের পূর্ব কর্মধা স্থানীয় বায়তুল আমান জামে মসজিদে প্রচারনায় গেলে তাতে বাঁধা প্রদান করেন স্থানীয় সর্দার ও মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল মন্নান। লাশের মরদেহ বহনে মসজিদে রক্ষিত খাঁটিয়া (করার) নিতে গেলে তিনি তাতেও বাঁধা প্রদান করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় গ্রামবাসী পার্শ্ববর্তী এলাকার মসজিদ থেকে খাঁটিয়া এনে কবরস্থানে নিয়ে লাশ দাফন করেন। এঘটনায় স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মৃত ফারুক আহমদের ছোট ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক জানান, আমার বাবা যেদিন মারার যান,আমি বেহুস অবস্থায় ছিলাম। আমার চাচাতারা মো. হাসিব আলী, মো. আলমগীর, মো. আলাউদ্দিন এই ৩জন কে মন্নান সর্দারের কাছে পাঠানো হয়েছে করাল (খাটিয়া) আনার জন্য। কিন্তু মন্নান সর্দার দেন নি। পরে কাঠালতলী বাজার মসজিদ থেকে করালের ব্যবস্থা করেন। তারপর বাবার দাফন কাফন সম্পন্ন হয়।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে একটা পেইজ থেকে ভিডিও বার্তায় জানানো হয় সর্দারের উপড় আনিত অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা, তবে ভিডিও বার্তায় আমরা এমন কোনো কথা বলিনি ও আমার ভাই বা আমাকে ক্যামেরার সামনে আনা হয়নি। তবে আমার চাচারা করাল আনতে গেলে মন্নান সর্দার করাল দেননি সেটা শতভাগ সত্য। এছাড়াও করাল আনতে গেলে বিভিন্ন টালবাহানা করেন তিনি। প্রতিদিনের মৌলভীবাজার অনলাইন পত্রিকা সহ বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় আমার বাবাকে নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সেটা সত্য।
এদিকে মৃত ফারুক আহমদের বড় ছেলে ফখরুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই সেখানে বাবা মারা যান। পরে রাত ৩টার দিকে বাবাকে নিয়ে বাড়িতে আসি। তখন বাড়িতে দেখতে পাই ছোট ভাইয়ে অবস্থা খারাপ। পরে চাচারা মাষ্টার ও আলাউদ্দিন সহ কয়েকজনকে করাল আনার জন্য সর্দার কাছে যান। কিন্ত তিনি করাল দেননি। তিনি তাদের জানান তুমরা পঞ্চায়েতের বাদ। বার বার করাল আনার জন্য গেলেও তিনি এখন অস্বীকার করছেন কেউ করাল আনেতে যাননি। এটা ১০০% সত্য করাল তিনি দেননি। আমার ভাইয়ে বক্তব্য সম্পুর্ন সত্য। বর্তমানে তারা চাচ্ছে আমাদেরকে বিভ্রান্তি করার জন্য। কিন্ত তারা সফল হবে না। কিন্তু আমরা পঞ্চায়েতের বাদ কিভাবে হবো। তারা জুড়ে আমাদের বাদ দিয়ে দিতে চায়।
মৃত ফারুক আহমদের ফুফুতো ভাই হাছিব আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘ফারুক ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমরা মসজিদের মাইকে প্রচার করতে গেলে স্থানীয় সর্দার আব্দুল মন্নান বাঁধা দেন। তার বাঁধার কারনে মসজিদের মাইকে আর প্রচার করা যায়নি। পরবর্তীতে লাশ বহন করে নেয়ার খাঁটিয়া (করার) আনতে আমরা চারজন মসজিদে গেলে আব্দুল মন্নান তাতেও বাঁধা দেন। তার বাঁধার কারনে মসজিদের খাঁটিয়া আনা সম্ভব হয়নি। পরে পার্শ্ববর্তী এলাকার মসজিদ থেকে খাঁটিয়া এনে লাশ বহন করে কবরস্থানে নিয়ে দাফন করি। এতে আমাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যদি মৃত ফারুক আহমদের পরিবারের কারো সাথে পঞ্চায়েতের কোনো ঝামেলা থাকে তাহলে লাশ দাফনের পরে ফারুক আহমদের দুই ছেলেকে নিয়ে এসে আপনার পায়ে ফেলবো এবং বিষয়টি সমাধান করবো। তারপরও তিনি করাল দেননি। ’
গ্রামের আব্দুল আজিজ, রফিক মিয়া, আব্দুল মুমিন ও জামাল আহমদ বলেন, প্রতি মাসে পরিবার প্রতি আমাদের মসজিদে মুঠি উঠলেও আব্দুল মন্নান কোন হিসাব দিতে চাননি। মুঠির হিসাব জানতে চাইলে আব্দুল মন্নান আমাদের উপর ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন এবং আমাদের কাছ থেকে আর কোন মুঠি নিতে লোক পাঠাননি। আব্দুল মন্নান গ্রামের প্রভাবশালী থাকার কারনে একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন। গ্রামের ৪৫টি পরিবারকে তিনি নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। গ্রামের ফারুক মিয়ার সাথে আব্দুল মন্নানের পূর্ববিরোধ থাকার কারনে লাশ নিয়ে যাওয়ার খাঁটিয়া মসজিদ থেকে নিতে বাঁধা দেন। পরে স্থানীয় মেম্বারের বিশেষ অনুরোধে কাঠালতলী জামে মসজিদ থেকে খাঁটিয়া এনে লাশ বহন করে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে মুঠি না দেয়ার অভিযোগে প্রতিবন্ধী ফারুক আহমদের বিষয়েও তিনি মসজিদের মাইকে প্রচারনায় বাঁধা দেন এবং খাঁটিয়া নিতে দেননি।
অভিযোগ বিষয়ে বায়তুল আমান জামে মসজিদের সভাপতি অভিযুক্ত আব্দুল মন্নান বলেন, যারা এখানে আসে খাঁটিয়া (করার) নিতে তারা লন্ডনীর পঞ্চায়েতের লোক ছিল। মৃত ব্যক্তির নিজস্ব লোকজনদের নিয়ে আসার কথা বলেছি। তাছাড়া মৃত ফারুক আহমদ আমাদের মসজিদে আড়াই বছর ধরে কোন মুঠি দিচ্ছে না। আমাদের পঞ্চায়েত থেকেও বের হয়ে গেছে। পরে মৃত ব্যক্তির নিজস্ব কেউ আমাদের কাছে আসেনি। এছাড়া আমি নিজে জানাযার নামাজেও উপস্থিত ছিলাম।
এব্যাপারে কুলাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি খুবই অমানবিক। তবে এই বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কেউ জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হতো।
এবিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদনের বিস্তারিত প্রতিদিনের মৌলভীবাজার পেইজে ভিডিও চিত্রে......
সম্পাদক ও প্রকাশক : সালাহ্উদ্দিন শুভ , মোবাইল : 01710668127 ইমেইল : protidinermoulvibazar@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | প্রতিদিনের মৌলভীবাজার | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।