বকেয়া মজুরির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) চা শ্রমিকেরা। সোমবার সকাল থেকে দেশের এনটিসির ১৬টি চাবাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানের প্রধান ফটকের সম্মুখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় বুধবারের মধ্যে পাওনা বকেয়া পরিশোধ না করলে আরও কঠোর অবস্থানের হুশিয়ারি দেয় চা শ্রমিকরা।
মানববন্ধনে অংশে নেওয়া চা শ্রমিকরা বলেন, ‘তাদের ছয় সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। মজুরি না পেয়ে তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করলে তাঁরা কাজে ফিরবে না। পূজার আগে বলল মজুরি দিয়ে দিবে। কিন্তু আমাদের মজুরি দেয়া হল না। টাকা না পেলে আমাদের সংসার চলবে কিভাবে, না খেয়ে মরতে হবে।’
কমলগঞ্জ পাত্রখোলা চা বাগানের যুব নেতা প্রদীপ পাল বলেন, ‘আমাদের চা শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই। তাঁরা অনেক কষ্ট করে চলছেন। যদি অনতিবিলম্বে বকেয়া মজুরি পরিশোধ না হয়, তবে চা বাগানগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলাই ভ্যালি কমিটির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, ‘শ্রমিকদের পাঁচ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। আমাদের শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই। তাঁরা অনেক কষ্ট করে চলছেন। এখন পেটে খিদা নিয়ে শ্রমিকেরা কাজ করবেন কীভাবে? মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করলে তাঁরা কাজে ফিরবেন না। তিনি বলেন, সারা দেশে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১৬টি চাবাগান আছে। এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার চাশ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের ওপর আরও ৩০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী জানান, দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করা শ্রমিক এক সপ্তাহের মজুরি না পেলে অবর্ণনীয় সমস্যায় পড়তে হয়। এরপরও মোট ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মজুরি পায়নি। কবে দেয়া হবে তার কোন নিশ্চয়তা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিতে পারছেন না। বিভাগীয় শ্রম দপ্তর এর উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসক এর বিভিন্ন উদ্যোগ ও আশ্বাস মালিকপক্ষের ব্যর্থতায় ইতিপূর্বে সফল হয়নি। এমতাবস্থায় হতাশ শ্রমিকরা গত সোমবার থেকে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রমিকদের সমর্থন দিয়েছেন। শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি বা নতুন কোন দাবি নিয়ে কোন ধর্মঘট করছেন না। পাওনা পরিশোধ করলে পেট ভরে ভাত খেয়ে আগামীকাল কাজে যেতে শ্রমিকরা প্রস্তুত। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক, মালিক, সরকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমতাবস্থায় মালিকদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি। সেই সঙ্গে মহাপরিচালক, শ্রম অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আবেদন করছি।
এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক বলেন,‘শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের পরিচালনা পর্ষদ পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠন না হওয়ার কারণে কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে। আশা করছেন, শিগগিরই পরিচালনা পরিষদের পূর্ণাঙ্গ গঠন হবে এবং শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, এখন চাবাগানগুলোতে উৎপাদনের সময়। এখন যদি শ্রমিকেরা কর্মবিরতিতে যান, তাহলে চা–বাগানের অনেক ক্ষতি হবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : সালাহ্উদ্দিন শুভ ,মোবাইল : 01710668127 ইমেইল : protidinermoulvibazar@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | প্রতিদিনের মৌলভীবাজার | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।