সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্তেই ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে তা চাঁদপুর ঘাটের এক দিনের ইলিশও না। রপ্তানির বিপক্ষে যারা বলে তারা ইমোশনাল।
রোববার সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। ইলিশ রপ্তানিতে বাণিজ্যিক সুবিধা আছে। ফরেন কারেন্সি আসে। রপ্তানি না করলে চোরাচালান হয়। ভারতে ইলিশ রপ্তানিতে বাহ্বা পেয়েছি। রপ্তানিতেও গ্রেটার ইন্টারেস্ট আছে।
তিনি আরও বলেন, পজিটিভলি দেখেন। পেঁয়াজ আসছে না? ওরা ডিউটি কমিয়ে দিয়েছে। ইমোশনাল কথা বলে লাভ নেই। সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেক ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী অক্টোবর মাসে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের বিশেষ অনুরোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এতে তার মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বাধীনভাবে এটা (রপ্তানির অনুমোদন) দিয়েছেন। তারা একটা অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ অনুমোদন দিয়েছেন। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের বিশেষ অনুরোধ ছিল। সে অনুযায়ী তারা করেছেন। এর সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের কমিটমেন্ট এখনো আগের মতোই আছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে চাই।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, যদি দাম বাড়ে সেই বিষয়ে অবশ্যই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রপ্তানি বন্ধের দায়িত্ব তো আমার নয়। আমি আহ্বান জানাতে পারি কিন্তু বন্ধ করতে পারি না। রপ্তানি বা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।
নজিরবিহীন বিক্ষোভ ও সহিংসতার মধ্যে গত মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়। এরপর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা টানাপড়েন তৈরি হয়। এ অবস্থায় কিছুদিন আগে এবার পূজায় ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২২ দিন ইলিশ ধরা-বিক্রি বন্ধ
একইদিনে ইলিশ রক্ষায় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় প্রতিবছরের মতো এবারও ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে ভিত্তি ধরে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ২২ দিন সব ধরনের ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সচিবালয়ে রোববার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইলিশ মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিকভাবে এ মাছ সংরক্ষণের দিন নির্ধারণ করা হয়। ইলিশ সুরক্ষায় বিজ্ঞানীরা পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সঙ্গে মিল রেখে এ দিন নির্ধারণ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সালাহ্উদ্দিন শুভ , মোবাইল : 01710668127 ইমেইল : protidinermoulvibazar@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | প্রতিদিনের মৌলভীবাজার | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।