মৌলভীবাজারের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন চিকিৎসক ও রোগীরা। অসহনীয় গরম ও ঘন ঘন লোডশেডিং দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে দিনের চেয়ে রাতে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে ভর্তি থাকা রোগীদের। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নারী রোগীরা। চলমান তাপপ্রবাহ আর দীর্ঘ লোডশেডিং মিলে হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
জানা যায়, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে বমি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। ৫০ শয্যায় উন্নীত করলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার (ডিএমএফ) দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটে প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র মানুষ।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে ২০১৮ সালে ৪০ কেভির অত্যাধুনিক শক্তিশালী জেনারেটর বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু জ্বালানি তেল কেনার অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটরটি চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। জেনারেটরটি চালু করলে ঘণ্টায় প্রায় ৬-৭ লিটার জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আইপিএস ব্যবহার করা হতো। কিন্তু মাস দু’য়েক আগে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সেটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে রাতে কর্তব্যরত নার্স, চিকিৎসক ও রোগীদের ঝুঁকি নিয়েই থাকতে হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মোমবাতি ব্যবহার করছেন অনেক রোগী। দরিদ্র রোগীরা অন্ধকারে বসে আছেন বিদ্যুতের অপেক্ষায়। আর নার্স ও চিকিৎসকরা টর্চ লাইটের আলো দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, ‘গরম যত বাড়ছে, লোডশেডিংও ততই বাড়ছে। গত তিন-চার দিন থেকে লোডশেডিং মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগীর পাশাপাশি গরমে কষ্ট পাচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। কোনো কোনো রাতে সারা রাত বিদ্যুৎ থাকছে না। গরমে বেডের অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকেরাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।'
হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা মফিজ মিয়া বলেন, ‘রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে মনে হয়, এটি হাসপাতাল নয়, ভূতের আস্তানা। এতো বড় হাসপাতালে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে না, তা ভাবাই যায় না।’
মাধবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ছাদেক মিয়ার সঙ্গে থাকা তার মা অজিফা খাতুন (৬৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে সুস্থ মানুষ থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে। আজ প্রায় ৫-৬ দিন ছেলেকে নিয়ে এখানে রয়েছি। রাতে কারেন্ট চলে গেলে খুবই কষ্ট হয়। সেদিন রাতে অন্ধকারে আমাদের খাবার বিড়ালে খেয়ে গেছে।’
মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি কেচুলুটি গ্রামের আলাল মিয়ার স্ত্রী পপি আক্তার ডলি (৪৫) বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো ওয়ার্ডটি অন্ধকার হয়ে যায়। তখন আমরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় থাকি’।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাজেদুল কবির বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগী দেখতে আমাদের ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ভুইয়া বলেন, ‘হাসপাতালের জন্য বরাদ্দকৃত জেনারেটরটি জ্বালানি তেলের অভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প আইপিএসটিও দুর্বল হয়ে যাওয়ায় কাজ করছেনা। বেশ কিছু দিন ধরে রোগীদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আলোর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। হাসপাতাল হলো গুরুর্ত্বপূর্ণ স্থান। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে সেসব ভ্যাকসিন নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া থেকে বিদ্যুৎ আসে কমলগঞ্জে। যদি হাসপাতালের লাইনটা আলাদা রাখা হয়। তাহলে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে না। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে একাধিকবার জানিয়েছি। তারা আমাদের পাত্তা দিচ্ছেনা।
কমলগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ে এর সমাধান হবে। তিনি বলেন, উপজেলা থেকে হাসপাতালের জন্য আইপিএস এর বরাদ্দ হয়েছে। সেটা সংযোগ হলে রোগীদের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা হবে।’
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এর সমাধান হবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক : সালাহ্উদ্দিন শুভ ,মোবাইল : 01710668127 ইমেইল : protidinermoulvibazar@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | প্রতিদিনের মৌলভীবাজার | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।