২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (০৬ জুন) সন্ধ্যা সাতটায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ভাষণের শুরুতে পবিত্র ঈদুল আজহার উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশবাসীকে ঈদুল আজহা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। গরিব প্রতিবেশী ও দুঃস্থরা যেন তাদের হক ঠিক মতো বুঝে পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন ড. ইউনূস।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। পাশাপাশি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’
ড. ইউনূস বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সে বিবেচনায় আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারব বলে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার—যা কি না জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়—সে বিষয়ে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারব।
তিনি বলেন, এ সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো একটি পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর শান্তিপূর্ণ, বিপুলভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা যাতে করে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। এজন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেগুলোতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে ছাত্র-জনতার সকল আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।
এপ্রিল পর্যন্ত সময় পেলে অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারবেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে বলে জানান তিনি।
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা এমন নির্বাচন চাই যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ও দল অংশ নিক। এটা সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে জাতির কাছে স্মরণীয় থাকুক।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে, তার সবগুলোরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন, এটা মনে রাখা জরুরি। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্যদিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ্যদিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে।
ড. ইউনূস বলেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ছিল ভয়াবহ। ১৬ বছরের লাগামহীন লুটপাটতন্ত্র দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই তুলনায় অর্থনৈতিক অবস্থা এখন ভালো। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে স্থিতিশীল করতে পেরেছি।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি বাজেট তার আগের বছরের বাজেট থেকে ছোট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই বাজেট প্রথাগত বাজেটের মতো নয়। এই বাজেটে ফোকাস দেওয়া হয়েছে মানুষকে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের লাখো ছেলেমেয়েরা মাদ্রাসায় পড়ে। তাদের বিদেশি ভাষাশিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য কাতার চ্যারেটির সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে ১ লাখ শ্রমিক পাঠানোর চুক্তি করেছি।
‘আমরা চাই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হোক। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমরা নাকি একে বিদেশিদের কাছে দিয়ে দিয়েছি। এই বন্দর হলো হৃৎপিণ্ড। এটা বড় করতে হবে। এই বন্দর হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চাবিকাঠি’ বলেন তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সালাহ্উদ্দিন শুভ ,মোবাইল : 01710668127 ইমেইল : protidinermoulvibazar@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | প্রতিদিনের মৌলভীবাজার | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।