গাজায় সংঘাত শেষ হলেও অনেকেই আর নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরতে পারবেন না। কারণ সেখানকার বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর এবং স্থাপনাই ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী আগ্রাসন চালায়নি। ফলে সেখানকার কোনো স্থানই এখন আর নিরাপদ নয়। খবর আল জাজিরার।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজার অনেক মানুষেরই ফিরে যাওয়ার জন্য আর কোনো নিরাপদ স্থান থাকবে না। সেখানকার ৬২ শতাংশ ঘরবাড়ি ইতোমধ্যেই ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া গাজার ৭৫ শতাংশের বেশি জনসংখ্যাই এখন বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। সেখানকার লোকজন এখনো জানেন না যে, সংঘাত কবে শেষ হবে।
প্রায় ৬ মাস ধরে গাজায় তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েল। সেখানকার ঘরবাড়ি, মসজিদ, হাসপাতালসহ কোনো স্থাপনাই ইসরায়েলি হামলা থেকে বাদ পড়েনি। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ৩৩ হাজার ৩৭ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরই গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সৈন্যদের হামলায় প্রতিদিনই সেখানে শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাচ্ছে।
গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, একটি বা দুই পা-ই হারিয়েছে গাজার এক হাজার শিশু।
ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ চায় মানবাধিকার কাউন্সিল
গাজায় গণহত্যার বিষয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইসরায়েলের কাছে সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছে। কারণ ইসরায়েলের হামলায় এরই মধ্যে গাজায় ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে সংস্থাটি। ৪৭ সদস্যের সংস্থাটিতে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ২৮টি। বিপক্ষে ৬টি ও ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে ১৩ দেশ।
জেনেভায় ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত মেরাভ ইলন শাহার এই প্রস্তাবকে মানবাধিকার কাউন্সিল ও জাতিসংঘের জন্য একটি ক্ষত বলে নিন্দা করেছেন।
প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আরও লঙ্ঘন ও সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ করতে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র, গোলাবারুদসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে দেশগুলোর কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গাজায় গণহত্যার যে ঝুঁকির কথা জানিয়েছিল সে বিষয়েও প্রস্তাবে জোর দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার ওআইসির পক্ষে মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রস্তাবটি পেশ করে পাকিস্তান। এতে দ্রুত যুদ্ধবিরতির ও জরুরি ত্রাণ প্রবেশের কথাও বলা হয়েছে। গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে
ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজাতে প্রায় ছয়মাস ধরে টানা যুদ্ধে হামলার পাশাপাশি ত্রাণ সরবরাহের পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে দখলদার ইসরায়েল। এতে উপত্যকাটিতে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ। বিশেষ করে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা উত্তর গাজায়। সেখানে অনাহার এবং পানিশূন্যতায় বহু শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, গাজায় অনাহার এবং পানিশূন্যতায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উত্তর গাজার হাসপাতালগুলো ভরে যাচ্ছে অনাহারে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দিয়ে। ওষুধ স্বল্পতার মধ্যেও তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন গাজার উত্তরাঞ্চলের চিকিৎসকরা। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন তারা।
জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ৫০ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সী ৩০ শতাংশ শিশু তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। এদিকে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি রয়েছে দুই হাজারের বেশি শিশু।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সালাহ্উদ্দিন শুভ ,মোবাইল : 01710668127 ইমেইল : protidinermoulvibazar@gmail.com
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | প্রতিদিনের মৌলভীবাজার | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।