বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছিল টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো সিরিজ হারানোর। কিন্তু সেটা করতে পারেনি নাজমুল শান্তর দল। সিলেটে লঙ্কানদের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে সিরিজ। সিরিজ হারলেও বাংলাদেশ দেখিয়েছিল লড়াইয়ের মানসিকতা। যেটা পুঁজি হতে পারে ওয়ানডে সিরিজে।

টি-টোয়েন্টির দুঃখ ভুলে আজ বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর আড়াইটায়। খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।

টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে ইতোমধ্যেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ সফরে আসার আগে আফগানিস্তানকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। লঙ্কানদের আরেকটু স্বস্তি দেবে আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিং। বর্তমানে ৯১ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে সপ্তম পজিশনে আছে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার দল। অন্যদিকে ৮৭ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে ওয়ানডেতে অষ্টম পজিশনে আছে বাংলাদেশ।

মুখোমুখি দেখায়ও পিছিয়েই থাকবে টাইগাররা। ওয়ানডেতে দুই দল অংশ নিয়েছে মোট ৫৪ ম্যাচে। তার মধ্যে ৪২টিতে জয় পেয়েছে ১৯৯৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। বিপরীতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১০ ম্যাচে। বাকি দুই ম্যাচে কোনো ফলাফল হয়নি।

এ তো গেল সব নেতিবাচক দিক। ইতিবাচক দিকও কম নেই বাংলাদেশের। ওয়ানডেতে ঘরের মাটিতে বরাবরই ভয়ংকর বাংলাদেশ। বাঘের থাবায় কাবু করেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারতের মতো পরাশক্তিদের। তাই র‌্যাঙ্কিংয়ে মাত্র এক ধাপ এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কাকে খুব বেশি ভয় পেয়ে মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই বাংলাদেশের।

ওয়ানডে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম ম্যাচের স্কোয়াডেও থাকবেন তিনি। যেটি আশাজাগানিয়া বাংলাদেশের জন্য। কারণ মুশফিকুর রহিমের পছন্দের দেশটিও যে শ্রীলঙ্কাই। যাদের পেলেই তিনি জ্বলে ওঠেন আপন মহিমায়। ২ সেঞ্চুরি আর ৩ ফিফটিতে লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১০৭২ রান করেছেন তিনি। ওয়ানডের সর্বোচ্চ ১৪৪ রানও লঙ্কানদের বিপক্ষেই। তাই এ ম্যাচে বিশেষ নজর থাকবে এই মিডল অর্ডার ব্যাটারের দিকে।

এ ম্যাচে ফিরছেন বাংলাদেশের হোপবয় মেহেদী হাসান মিরাজও। ওয়ানডেতে বরাবরই দুর্দান্ত মিরাজ। যেমন কিপ্টে বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের রানের গতি চেপে ধরেন; তেমনি ভরসার প্রতীক হয়ে দাঁড়ান শেষ দিকে ব্যাট হাতে। তাই স্বাভাবিকভাবেই শক্তির বিচারে কিছুটা এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নিজের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেছিলেন দীর্ঘদিন পরে দলে ফেরা ওপেনার সৌম্য সরকার। দারুণ ফর্মেও আছেন তিনি। এই ম্যাচে তাই তিনিও হতে পারেন লঙ্কানদের জন্য ভয়ের আরেক নাম।

তবে একক কোনো খেলোয়াড়ের ওপর প্রত্যাশার চাপ দিতে চান না অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। খেলতে চান সবাই মিলে দল হিসেবে, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে ভালো খেলা। নিউজিল্যান্ড সিরিজে সেটা পেরেছি, সেখানে আমরা সব ম্যাচ জিততে চেয়েছি। বিশ্বকাপেও এটা দেখতে হবে দল হিসেবে আমরা কতটা ভালো ক্রিকেট খেলছি, খারাপ সময়ে একজন আরেকজনকে কতটা সমর্থন করছি।’ ওয়ানডেতে এমনটা করতে পারলে বাংলাদেশের জয় আটকানো দুঃসাধ্য হয়ে যাবে শ্রীলঙ্কার জন্য।

ম্যাচটা যেহেতু ঘরের মাঠে, তাই বিশেষভাবে খুশি হতেই পারে টাইগাররা। কারণ চট্টগ্রামের প্রায় পুরোটা গ্যালারিই সমর্থন দেবে লিটন-সৌম্যদের। যেটা মানসিকভাবে বেশ প্রফুল্ল করবে টাইগারদের। অন্যদিকে কিছুটা বিষণ্ণ করবে লঙ্কানদের।

সব মিলিয়ে শেষ ম্যাচের হার থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে নাজমুল শান্তর দল। টাইগারদের প্রিয় ফরম্যাটে জয় দিয়েই শুরু করতে চাইবে।